This blog have moved to FFTsys's domain. Newer posts will appear on the new URL of the blog. Thanks for visiting.

Wednesday, August 18, 2010

বাংলা কবিতা: তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা!

তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা!
ভয় নেই এমন দিন এনে দেব
দেখ সেনাবাহিনীর বন্দুক নয়, শুধু গোলাপের তোড়া হাতে
কুচকাওয়াজ করবে তোমার সামনে,
শুধু তোমাকেই তোমাকেই স্যালুট করবে তারা দিনরাত।।

ভয় নেই এমন দিন এনে দেব
বনবাদাড় ডিঙিয়ে, কাঁটাতার পেড়িয়ে,
ব্যারিকেড পেরিয়ে, সাঁজোয়া গাড়ির ঝাঁক আসবে,
বেহালা, গীটার, বাঁশি, হারমোনিকা নিয়ে
শুধু তোমারি তোমারি দোড়গোড়ায়, প্রিয়তমা।।

ভয় নেই এমন দিন এনে দেব
বোমারু জঙ্গী যত বিমানের ঝাঁক থেকে
বোমা নয়, গুলি নয়, চকলেট, টফি রাশি রাশি
প্যারাটুপারের মত ঝড়বে ঝড়বে
শুধু তোমারি তোমারি উঠোন জুড়ে প্রিয়তমা।।

তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা!

-- শহীদ কাদরী


বাংলা কবিতা: একটি ফটোগ্রাফ

‘এই যে আসুন, তারপর কী খবর?
আছেন তো ভাল? ছেলেমেয়ে?’ কিছু আলাপের পর
দেখিয়ে সফেদ দেয়ালের শান্ত ফটোগ্রাফটিকে
বললাম জিজ্ঞাসু অতিথিকে–
‘এই যে আমার ছোট ছেলে, যে নেই এখন,
পাথরের টুকরোর মতন
ডুবে গেছে আমাদের গ্রামের পুকুরে
বছর-তিনেক আগে কাক-ডাকা গ্রীষ্মের দুপুরে।’

কী সহজে হয়ে গেল বলা,
কাঁপলো না গলা
এতটুকু, বুক চিরে বেরুলো না দীর্ঘশ্বাস, চোখ ছলছল
করলো না এবং নিজের কন্ঠস্বর শুনে
নিজেই চমকে উঠি, কি নিস্পৃহ, কেমন শীতল।
তিনটি বছর মাত্র তিনটি বছর
কত উর্ণাজাল বুনে
কেটেছে, অথচ এরই মধ্যে বাজখাঁই
কেউ যেন আমার শোকের নদীটিকে কত দ্রুত রুক্ষ চর
করে দিলো। অতিথি বিদায় নিলে আবার দাঁড়াই
এসে ফটোগ্রাফটির প্রশ্নাকুল চোখে,
ক্ষীয়মান শোকে।

ফ্রেমের ভেতর থেকে আমার সন্তান
চেয়ে থাকে নিষ্পলক,তার চোখে নেই রাগ কিংবা অভিমান।

-- শামসুর রাহমান


বাংলা কবিতা: স্বাধীনতা তুমি

স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।

-- শামসুর রাহমান


বাংলা কবিতা: উত্তর

তুমি হে সুন্দরীতমা নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতেই পারো
‘এই আকাশ আমার’
কিন্তু নীল আকাশ কোনো উত্তর দেবেনা।

সন্ধ্যেবেলা ক্যামেলিয়া হাতে নিয়ে বলতেই পারো,
‘ফুল তুই আমার’
তবু ফুল থাকবে নীরব নিজের সৌরভে আচ্ছন্ন হয়ে।

জ্যোত্স্না লুটিয়ে পড়লে তোমার ঘরে,
তোমার বলার অধিকার আছে, ‘এ জ্যোত্স্না আমার’
কিন্তু চাঁদিনী থাকবে নিরুত্তর।

মানুষ আমি, আমার চোখে চোখ রেখে
যদি বলো, ‘তুমি একান্ত আমার’, কী করে থাকবো নির্বাক ?
তারায় তারায় রটিয়ে দেবো, ‘আমি তোমার, তুমি আমার’।

-- শামসুর রাহমান