This blog have moved to FFTsys's domain. Newer posts will appear on the new URL of the blog. Thanks for visiting.

Tuesday, November 2, 2010

মানিক বন্দোপাধ্যায় - চিহ্ন


অনেক অপন্যাসের ভিড়ে একটি উপন্যাস পড়লাম। উপন্যাসের নাম চিহ্ন, ঔপন্যাসিক মানিক বন্দোপাধ্যায়। উপন্যাসটি যেন জীবনের অনৈতিক অংশ থেকে নৈতিক দিকে উত্তরণের একটি প্রচেষ্টা, একটি জাগরণ, একটি মহাবিপ্লব। আমাদের মনের যে দিকটাকে আমরা অতিশুদ্ধ বলে জানি তাও যে অধ:পতনের রুপান্তর হতে পারে তা দেখানো।

উপন্যাসে আছে অনেকরকম কৌতূহলউদ্দীপক চরিত্র। যে কোন ছায়াছবি অপেক্ষা যেন আরো অনেক বেশী রোমাঞ্চকর, অনেক বেশী অভিযানময়। আছে মানবমনের বিভিন্ন দিক নিয়ে নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ। ঔপন্যাসিককে ঠিক গতানুগতিক মনে হয় না। বিজ্ঞানীর মতই যেন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিত্রায়িত করেছেন অসাধারণ সব ঘটনার প্রবাহ।

কিছু অংশ উদ্ধৃত করলাম।

(হেমন্ত সম্পর্কে প্রগতিশীল চরিত্র সীতা)
“হেমন্তের দোষ নেই! এমন যার মা, আতুঁড় থেকে আজ এত বয়স পর্যন্ত যার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত এই মা নিয়ন্ত্রণ করে এসেছে, তার হৃদয়-মনের গঠনের ত্রুটির জন্য সে নিজে কতটুকু দায়ী। এটুকু সীতা জানে যে শৈশবে মনের যে গঠন হয় জীবনে তার আর পরিবর্তন হয় না। সজ্ঞান সাধনায় পরবর্তী জীবনে চিন্তা ও অনুভূতির জগতে নতুন ধারা আনা যায় আপসহীন অবিশ্রাম কঠোর সংগ্রামের দ্বারা। নিজের সঙ্গে লড়াই করার মতো কষ্টকর, কঠিন ব্যাপার আর কি আছে জীবনে। বুদ্ধি দিয়ে যদি বা আদর্শ বেছে নেয়া গেল, কর্তব্য ঠিক করা গেল, সে আদর্শ অনুসরণ করা, সে কর্তব্য পালন করা যেন ঝকমারি হয়ে দাঁড়ায় যদি তা বিরুদ্ধে যায় প্রকৃতির। ইন্টেলেকচুয়ালিজমের ব্যর্থতার কারণও তাই! বুদ্ধির আবিষ্কার, বুদ্ধির সিদ্ধান্ত কাজে লাগানোর চেয়ে অন্ধ অকেজো ভালোলাগা ও পছন্দকে মেনে চলা অনেক সহজ, অনেক মনোরম। বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে তাই অধ:পতন এত বেশি। এত বেশী হতাশা। কথার এত মারপ্যাঁচ। এত ফাঁকিবাজি। বিশ্বাসের এমন নিদারুণ অভাব।”
– পৃষ্ঠা: ৩৭

কথা কি মূল্যহীন?
“কথা কত সহজে কি অনিবার্যভাবে কাজে রুপান্তরিত হতে পারে? কন্ঠের প্রতিবাদ পরিণত হতে পারে জীবনপণ ক্রিয়ায়!”
– পৃষ্ঠা: ৯

মৃত্যুর পরের বাস্তবতা,
“মরেই যে গেছে, বিশেষ করে যাকে স্পষ্টই চেনা যায় কুলি বা চাকর বলে, তার জন্য হাসপাতালের লোক বেশী আর মাথা ঘামাতে চায় না। মরণের খবর জানবার প্রয়োজন যেন কিছু কম তার আপনজনের , প্রাণহীন শরীরটা যেন কিছু কম মূল্যবান তাদের কাছে।“
– পৃষ্ঠা: ৩১

মৃত্যুপথযাত্রী আন্দোলনকর্মী রসুলের মা,
“আবদুলেরও ঘুম হয় নি, তার চোখ দুটিও টকটকে লাল হয়ে উঠেচে। সে চোখের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে ঘুমন্ত শহরের শেষরাত্রির শেষরাত্রির স্তব্ধতা যেন প্রশ্ন হয়ে ওঠে আমিনার কাছে: তোর কি শুধু একটি ছেলে?

কে নিজের ছেলে কে পরের ছেল ভাববার ক্ষমতা নিজের ছেলেই তার লোপ পাইয়ে এনেছে ক্রমে ক্রমে। অজানা অচেনা অসংখ্য ছেলে তার রসুলের সঙ্গে হতাহত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে তার বুকের মধ্যে।”
– পৃষ্ঠা: ৪৬

ছাত্র রাজনীতির ওপর বলিষ্ঠ সব মতবাদ ব্যক্ত হয়েছে এই উপন্যাসে। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ। সে রাজনীতি কি আর আজকের রাজনীতি কি! রাজনীতির কৌশল সবই আছে শুধু নৈতিকতাটা নাই! আর আছে প্রকট লোলুপতা।

No comments:

Post a Comment